গাজার সংকট আরও গভীর: হাসপাতাল ধ্বংস, খাদ্য সংকট, ইসরায়েলের হামলায় শত শত নিহত
গাজায় মৃত্যুর জন্য হামাসকে দায়ী করছে যুক্তরাষ্ট্র
যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, ইসরায়েলি হামলা পুনরায় শুরু হওয়ার পর থেকে গাজায় প্রায় ৬০০ জন নিহত হয়েছে এবং এর সম্পূর্ণ দায় হামাসের ওপর বর্তায়। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে (UNSC) বক্তব্য রাখার সময়, জাতিসংঘে যুক্তরাষ্ট্রের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত ডরোথি শিয়া বলেন, “হামাস গাজায় চলমান যুদ্ধের জন্য দায়ী এবং তাদের কারণে নতুন করে সংঘর্ষ শুরু হয়েছে।” তিনি আরও বলেন, “প্রত্যেকটি মৃত্যু এড়ানো যেত যদি হামাস যুক্তরাষ্ট্রের গত সপ্তাহের প্রস্তাব গ্রহণ করত।”
গাজার একমাত্র ক্যান্সার হাসপাতাল ধ্বংস করল ইসরায়েল
তুরস্কের অনুদানে নির্মিত তুর্কি-ফিলিস্তিনি মৈত্রী হাসপাতাল, যা গাজার একমাত্র ক্যান্সার চিকিৎসাকেন্দ্র, ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়ে গেছে।
তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, “এই হামলা গাজাকে বসবাসের অনুপযোগী করার এবং ফিলিস্তিনিদের জোরপূর্বক উচ্ছেদের পরিকল্পনার অংশ।”
তারা আরও জানিয়েছে, “এই গণহত্যার জন্য যারা দায়ী, তাদের আন্তর্জাতিক আদালতে জবাবদিহিতার মুখোমুখি হতে হবে।”
ইসরায়েলের বিমান হামলায় বিশ্ববিদ্যালয় ও হাসপাতাল লক্ষ্যবস্তু
সকালের পর থেকে গাজার বিভিন্ন স্থানে ইসরায়েলি বিমান হামলায় বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে:
- গাজার তুফফাহ এলাকায় বিমান হামলায় ৫ জন নিহত ও অনেকে আহত হয়েছে।
- খান ইউনুসের আবাসান এলাকায় এক বাড়িতে হামলায় ২ জন নিহত হয়েছে।
- তুর্কি-ফিলিস্তিনি মৈত্রী হাসপাতাল সম্পূর্ণ ধ্বংস করা হয়েছে।
- ইসলামিক ইউনিভার্সিটির মেডিকেল ফ্যাকাল্টি-তে বিমান হামলা চালানো হয়েছে।
গাজার খাদ্য সংকট চরমে, জাতিসংঘের সতর্কতা
জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থা (UNRWA) জানিয়েছে যে গাজায় এখন মাত্র ছয় দিনের জন্য পর্যাপ্ত ময়দা মজুত রয়েছে।
জাতিসংঘের কর্মকর্তা স্যাম রোজ বলেন, “আমরা খাবার সরবরাহ দীর্ঘায়িত করতে পারি, তবে আমরা এখন সপ্তাহ নয়, বরং দিনের হিসেবে খাবারের মজুত হিসাব করছি।”
এছাড়া,
- বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির (WFP) সহায়তায় পরিচালিত ২৫টি বেকারির মধ্যে ৬টি ইতোমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে।
- ইসরায়েলের অবরোধের কারণে খাবারের দাম ২০০% পর্যন্ত বেড়ে গেছে।
- বহু মানুষ খাবার সংগ্রহের জন্য রাস্তায় ভিড় করছে।
যুক্তরাজ্যের নিন্দা: গাজায় ইসরায়েলের অবরোধ ‘অগ্রহণযোগ্য’
যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামি ইসরায়েলের সামরিক হামলা এবং মানবিক সহায়তা বন্ধের তীব্র সমালোচনা করেছেন।
তিনি বলেন, “গাজার পরিস্থিতি এখন বিশ্বের সবচেয়ে বিপজ্জনক মানবিক সংকটের মধ্যে একটি। হাজার হাজার মানুষ পানীয় জল, বিদ্যুৎ এবং খাদ্য ছাড়া বেঁচে থাকার লড়াই করছে।”
তিনি আরও জানান, “একজন ব্রিটিশ নাগরিকও এই হামলায় আহত হয়েছেন, যা আরও প্রমাণ করে যে গাজায় জাতিসংঘের অফিস ও মানবিক সংস্থাগুলোও ইসরায়েলের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে।”
ইসরায়েলের বসতি সম্প্রসারণ অব্যাহত: জাতিসংঘের উদ্বেগ
জাতিসংঘের মধ্যপ্রাচ্য শান্তি প্রক্রিয়ার বিশেষ সমন্বয়ক সিগ্রিড কাগ জানিয়েছেন যে, ইসরায়েল ডিসেম্বর থেকে মার্চের মধ্যে ১০,৬০০টি নতুন অবৈধ বসতি অনুমোদন বা পরিকল্পনা করেছে।
তিনি আরও উল্লেখ করেন,
- ফিলিস্তিনিদের সম্পত্তি দখল, ভাঙচুর ও জবরদখল বৃদ্ধি পেয়েছে।
- পশ্চিম তীরের তুলকারেম ও জেনিন শরণার্থী শিবির থেকে ফিলিস্তিনি বাসিন্দাদের জোরপূর্বক সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
ফ্রান্সের ঘোষণা: গাজা ও পশ্চিম তীরের দখল মেনে নেওয়া হবে না
ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যাঁ-নোয়েল ব্যারো স্পষ্ট করে বলেছেন, “আমরা গাজা বা পশ্চিম তীরের কোনো ধরনের সংযুক্তি (অ্যানেক্সেশন) মেনে নেব না। আমাদের একমাত্র লক্ষ্য দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধান।”
এর আগে, ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাজ বলেছিলেন, “যতদিন হামাস ইসরায়েলি বন্দিদের মুক্তি দেবে না, ততদিন গাজার আরও অংশ ইসরায়েল দখল করবে।”
গাজায় যুদ্ধাপরাধ ও মানবিক সংকট নিয়ে বিশ্ব উদ্বিগ্ন
বর্তমানে গাজার মানবিক পরিস্থিতি দ্রুত অবনতির দিকে যাচ্ছে।
- হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা বন্ধ হয়ে গেছে।
- খাদ্য ও পানীয় জল সংকট চরম পর্যায়ে।
- ইসরায়েলি সামরিক অভিযান অব্যাহত থাকায় মৃতের সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে।
বিশ্ব সম্প্রদায় এখন গাজার চলমান সংকট মোকাবিলায় কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছে।