ভ্যানে মানুষের নিথর দেহ স্তূপ করার একটি ভিডিও সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। গা শিউরে উঠা ভিডিওটি ছিল ছাত্র-জনতার আন্দোলনের কয়েকজন ব্যক্তির। ভ্যানে নিথর দেহের স্তূপের ১ মিনিট ১৪ সেকেন্ডের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওটি ছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময়ে নিহত কয়েকজনের। যাদের নাম পরিচয় এখনও জানা যায়নি।
শুক্রবার (৩০ আগস্ট) সকাল থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিওটি ভাইরাল হয়েছে। আর এরপর থেকেই সারাদেশে আলোচনা শুরু হয় ভিডিওর ঘটনাস্থল কোথায় সেটি নিয়ে। পরে ভিডিওতে দেখা দেয়ালের একটি পোস্টার দেখে ঘটনাস্থল ঢাকার আশুলিয়া থানার সামনে বলে জানা যায়।
শনিবার আশুলিয়া থানার সামনের এলাকায় গিয়ে ভাইরাল হওয়া ভিডিওর ঘটনাস্থলের সাথে সেই স্থানের মিল রয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, নির্মম এই ঘটনাটি ঘটেছে সাভারের আশুলিয়ায়। ভিডিওতে দেখা যাওয়া হেলমেট পরিহিত পুলিশ সদস্যদের একজন ঢাকা উত্তরের গোয়েন্দা পুলিশের তদন্ত কর্মকর্তা আরাফাত হোসেন। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঘটনাটি ৫ আগস্ট বিকেলের।
ভিডিওতে দেখা যায়, ভ্যানের ওপর তোলা হচ্ছে একের পর এক মরদেহ, একটির ওপর আরেকটি রক্তাক্ত লাশ; মাথায় হেলমেট বুকে ভেস্ট পরিহিত কয়েকজন পুলিশ সদস্য ব্যস্ত এই কাজে। মরদেহগুলো ঢেকে দেওয়া হলো ময়লা চাদর আর রাস্তার পাশের ব্যানারে। চাদর আর ব্যানারের আড়াল থেকে দেখা যাচ্ছে হাত-পা-মাথা…।
প্রত্যক্ষদর্শী হাবিবুর রহমান বলেন, সেদিন আমরা ভয়ংকর চিত্র দেখলাম। একপাশে আন্দোলনকারীরা অন্যপাশে পুলিশ। একপর্যায়ে পুলিশ আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে গুলি চালায়। এতে ঘটনাস্থলেই কয়েকজন মারা যান। এরপর ছয়টি মরদেহ একটি ভ্যানে তোলে পুলিশ। কিছু সময় পরই সেসব মরদেহ পুলিশের গাড়িতে দেখা যায়। তখন মরদেহগুলোসহ সেই গাড়িটি আগুনে জ্বলছিল।
জানা গেছে, ভ্যানে মোট মরদেহের সংখ্যা ছিল ছয়টি। যার মধ্যে চারজনের পরিচয় মিলেছে। তারা হলেন- সাজ্জাদ হোসেন সজল, তানজিল আহমেদ সুজয়, বাইজিদ ও সবরু হুমায়ুন। বাকি দুজনের পরিচয় এখনো মেলাতে পারেনি পুলিশ।
অভিযোগ আছে, মরদেহগুলো পুলিশের গাড়িতেই পুড়েছে। আশুলিয়া থানা সংলগ্ন বাইপাইল কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা মোফাজ্জল হোসেনের সাথে কথা বলে জানা যায়, ৫ আগস্ট দুপুরের পর থেকে তারা মসজিদে আসেননি। তবে পরদিন সকালে পুড়ে যাওয়া ছয়টি মরদেহের জানাজা পড়ানো হয় সেখানে।
এ ব্যাপারে ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার আহম্মদ মুঈনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আজ সকালে ভিডিওটি দেখেছি। এটি এনালাইসিস করা হচ্ছে। আপনারা যেহেতু মিডিয়ায় কাজ করেন, কোনো তথ্য কিংবা সূত্র পেলে আমাদের সহযোগিতা করার অনুরোধ করছি।