নুসরাত ফারিয়াকে ঘিরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে সমালোচনার ঝড় বইছে। এই ঝড় থামার লক্ষণ নেই। বরং বাড়ছেই। বাবা যাদব পরিচালিত নতুন সিনেমা ‘বস ২’-এর ‘আল্লাহ মেহেরবান’ শিরোনামের একটি গান এই সমালোচনার মূলে। গতকাল শুক্রবার ইউটিউবে গানটি প্রকাশিত হয়েছে। গানের সঙ্গে ফারিয়ার খোলামেলা পোশাক আর আবেদনময়ী নাচের ভঙ্গিমার কারণে ব্যাপক সমালোচনা হচ্ছে।
ঈদুল ফিতরে মুক্তি পাওয়ার কথা কলকাতার হিট ছবি ‘বস’-এর সিক্যুয়েল ‘বস ২’। সিনেমা মুক্তি পাওয়ার আগে আলোচনায় আসার জন্য গানটি মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। হিতে বিপরীত হয়ে সমালোচনার মুখে পড়েছেন ফারিয়া। যা এর আগে দেশের সিনেমার আলোচিত এই নায়িকার অভিনয়জীবনে কখনোই ঘটেনি।
একসময় উপস্থাপনা নিয়ে ব্যস্ত থাকা নুসরাত ফারিয়া ‘আশিকী’ সিনেমা দিয়ে বড় পর্দায় নাম লেখান। এরপর আরও পাঁচটি সিনেমায় কাজ করেছেন তিনি। ‘বস ২’ তাঁর সাত নম্বর সিনেমা। ‘লাকি সেভেন’ হওয়ার বদলে এটি উল্টো দুভার্গ্য বয়ে এনেছে বলে অনেকের অভিমত।
এ বিষয়ে আজ দুপুরে প্রথম আলোকে ফারিয়া বলেন, ‘আমরা যখন কোনো সিনেমায় কাজ করি, তখন শুধুমাত্র অভিনয়শিল্পী হিসেবেই কাজ করি। একজন অভিনয়শিল্পীকে বিভিন্ন ধরনের চরিত্রে অভিনয় করতে হয়। অনেক কিছু উপস্থাপন করতে হয়। এই গানেও গল্পের খাতিরে পরিচালকের নির্দেশে এসব আমাকে করতে হয়েছে।’
‘আল্লাহ মেহেরবান’ গানের ইউটিউব ও ফেসবুকে মন্তব্যকারীদের অনেকে নুসরাত ফারিয়ার উদ্দেশে গালিও ছুড়ছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি জানি অনেকে আমাকে গালি দিচ্ছেন। আমার মনে হয় সবার এতটুকু বিবেকবোধ ও বিবেচনা থাকা উচিত যে এসব কখনোই শিল্পীর সিদ্ধান্তে হয় না। শিল্পী তাঁর নিজের পছন্দমতো গানের সঙ্গে পোশাক পরে নাচ শুরু করে দিতে পারে না। এটা কিন্তু পুরো টিমের সিদ্ধান্ত।’
গানটা বিতর্ক ছড়াচ্ছে মনে করলেও এই গানের মাধ্যমে কারও কোনো ক্ষতি হচ্ছে বলে মনে করছেন না নুসরাত ফারিয়া। তিনি বলেন, ‘এটা ঠিক, একটু-আধটু বিতর্ক হচ্ছে। কিন্তু এই গান কাউকে ক্ষতি করছে না। গানটার মধ্যে খারাপ কিছু তো বলা নেই। গানের কথা খুব ভালো। এখন আমার উপস্থাপন নিয়ে যদি বলে, তাহলে বলব, এমন উপস্থাপনের পেছনেও কোনো না কোনো কারণ আছে। সিনেমা না দেখলে এটা দর্শক কখনোই বুঝতে পারবে না। একটা সিনেমার গল্প এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য একজন অভিনয়শিল্পীকে যেভাবে উপস্থাপনের দরকার, পরিচালক সেভাবেই করেছে।’
কথায় কথায় নুসরাত ফারিয়া বাইরের দেশের গান ও অভিনয়শিল্পী প্রসঙ্গে টেনেছেন। তিনি বলেন, ‘আমার অবাক লেগেছে এই জন্য যে যখন “মাশাল্লাহ মাশাল্লাহ” গানের সঙ্গে সবাই ক্যাটরিনা কাইফের খোলামেলা নাচে হুমড়ি খেয়ে পড়ে, তাঁকে ভালোবেসেছে, প্রশংসা করছে। যখন আমরা ভিন্ন কিছু করার চেষ্টা করছি, তখন প্রশংসার বদলে গালি দেওয়া হচ্ছে। এটা আমার অনেক বড় আফসোস। আমরা বাইরের ব্যাপারগুলো খুব সহজে গ্রহণ করি কিন্তু নিজেরা যখন ভিন্ন কিছু করার চেষ্টা করছি, তখন গালি দেওয়া হচ্ছে! এটা একবারেই ঠিক নয়। এমনটা যদি হয় তাহলে তো আমরা কখনোই এগোতে পারব না।’
নসুরাত ফারিয়া বলেন, ‘এই গানের মাধ্যমে কোনো অবস্থায় ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করা হয়নি। এ ধরনের বিতর্ক তৈরি করে বিভ্রান্তি ছড়ানোর কোনো মানে হয় না। একটা বাণিজ্যিক সিনেমা মানেই কল্পনা ও পুরোপুরি বিনোদন। এসব নিয়ে কেন এত বিতর্ক তৈরি করা হচ্ছে, তা মোটেও আমি ভেবে পাচ্ছি না।’
প্রাঞ্জলের কথায় জিৎ গাঙ্গুলীর সুর ও সংগীতে ‘আল্লাহ মেহেরবান’ গানটিতে কণ্ঠ দিয়েছেন নাকাশ ও জনিতা। কোরিওগ্রাফি করেছেন নির্মাতা বাবা যাদব। এদিকে গানটি নিয়ে আলোচনা যতই চলছে তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ইউটিউবে ভিউও বাড়ছে। দুপুর পর্যন্ত গানটি দেখা হয়েছে ৬ লাখ ১১ হাজার ৫৩১ বার। গানটি লাইক করেছে ৮ হাজার ১২ জন আর ডিসলাইক দিয়েছে ৫ হাজার ৮৯২ জন।